বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের নাম শুনলেই মনে আসে নীল জলরাশির এক মোহনীয় দৃশ্য। এই জায়গাটি কেবল একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়; এটি প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার এক আদর্শ স্থান। কিন্তু কক্সবাজারে যাতায়াত এতদিন পর্যন্ত অনেকের জন্য বেশ ঝক্কির ব্যাপার ছিল। দীর্ঘ সড়কপথ, ক্লান্তিকর ভ্রমণ, আর ট্র্যাফিক জ্যামের কথা ভাবলেই অনেকের মন খারাপ হয়ে যেত।
তবে ২০২৫ সালে “সৈকত এক্সপ্রেস” চালুর মাধ্যমে এই ভ্রমণের গল্পটি একেবারেই বদলে গেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই ট্রেনটি চালু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে টিকিট মূল্য (Chittagong to cox’s bazar train ticket price) বিষয়ে পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। চলুন, এই নতুন ট্রেনটির যাত্রা, টিকিট মূল্য, সময়সূচী এবং সুবিধাগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানি।
সৈকত এক্সপ্রেস: ভ্রমণের এক নতুন আনন্দ

কক্সবাজারে যাওয়া মানেই এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। সৈকত এক্সপ্রেস এই যাত্রায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এটি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজারের পথে চালিত হয়, যা যাত্রীদের ভ্রমণকে সহজ, আরামদায়ক, এবং ঝামেলামুক্ত করে তুলেছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া পেতে পেতে যাত্রা করার আনন্দ যে কতটা অন্যরকম হতে পারে, তা সৈকত এক্সপ্রেসে না উঠলে বোঝা সম্ভব নয়। পাহাড়, নদী, সবুজ প্রকৃতি এবং হালকা বাতাস—সব মিলিয়ে এটি শুধুই ভ্রমণ নয়, একটি স্মৃতিময় অভিজ্ঞতা।
সৈকত এক্সপ্রেসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
সৈকত এক্সপ্রেস কেন এত জনপ্রিয়, তার কারণ এর বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যগুলো। এটি শুধু একটি সাধারণ ট্রেন নয়; এটি যাত্রীদের আরাম এবং আনন্দের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
১. আরামদায়ক কোচ:
ট্রেনটির কোচগুলো অত্যাধুনিক এবং যাত্রীদের আরামের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা। এসি এবং নন-এসি উভয় ধরনের কোচে আরামদায়ক সিট এবং প্রশস্ত জায়গা থাকবে।
২. খাবারের ব্যবস্থা:
যাত্রাপথে যাত্রীদের জন্য খাবার ও পানীয় পরিবেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মান অত্যন্ত ভালো এবং সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে।
৩. নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ট্রেনের প্রতিটি কোচে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং প্রফেশনাল স্টাফ থাকবে।
৪. প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ:
ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা যায় পাহাড়, নদী, এবং গ্রামীণ পরিবেশের সৌন্দর্য। এটি যাত্রার ক্লান্তি দূর করে এবং মনকে সতেজ করে।
৫. সাশ্রয়ী ও দ্রুত যাত্রা:
সড়কপথে ট্রাফিক জ্যামে সময় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি নেই। ট্রেনটি সময়মতো পৌঁছানোর জন্য পরিচিত।
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
১. আরামদায়ক কোচ | এসি ও নন-এসি কোচে আরামদায়ক সিট এবং প্রশস্ত স্থান |
২. খাবারের ব্যবস্থা | সুলভ মূল্যে মানসম্মত খাবার ও পানীয় পরিবেশন |
৩. নিরাপত্তা ব্যবস্থা | সিসিটিভি ক্যামেরা ও প্রফেশনাল স্টাফ দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত |
৪. প্রাকৃতিক দৃশ্য | জানালা দিয়ে পাহাড়, নদী, ও গ্রামীণ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ |
৫. সাশ্রয়ী ও দ্রুত যাত্রা | ট্রাফিক জ্যামের ঝুঁকি নেই, নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা |
সৈকত এক্সপ্রেসের সময়সূচী

ভ্রমণের সঠিক পরিকল্পনা করতে সময়সূচী জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৈকত এক্সপ্রেস প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচল করে। যাত্রাপথে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য চট্টগ্রামের ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী ও সাতকানিয়া এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে।
- চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার:
- ছাড়ার সময়: সকাল ৬টা ১৫ মিনিট।
- পৌঁছানোর সময়: সকাল ৯টা ৫৫মিনিট।
- কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম:
- ছাড়ার সময়: সকাল ১০:৩০
- পৌঁছানোর সময়: দুপুর ২:৩০
রুট | ছাড়ার সময় | পৌঁছানোর সময় |
---|---|---|
চট্টগ্রাম → কক্সবাজার | সকাল ৬:১৫ | সকাল ৯:৫৫ |
কক্সবাজার → চট্টগ্রাম | সকাল ১০:৩০ | দুপুর ২:৩০ |
এই নির্ভুল সময়সূচী পর্যটকদের পরিকল্পনায় অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে।
🔹 নোট: সময়সূচী পরিবর্তিত হতে পারে।
Chittagong to cox’s bazar train ticket price (সৈকত এক্সপ্রেসের টিকিট মূল্য ও শ্রেণিবিন্যাস)

“সৈকত এক্সপ্রেস” বিভিন্ন ধরনের যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী আরাম ও সুবিধা বিবেচনায় যাত্রীরা টিকিট কিনতে পারেন। মোট ৭৪৩টি আসন এবং ১৬টি কোচ নিয়ে ট্রেনটি চলাচল করে।
শ্রেণি অনুযায়ী টিকিটের সম্ভাব্য মূল্য:
- শোভন শ্রেণি: ৪৫০ টাকা
- শোভন চেয়ার: ৭০০ টাকা
- স্নিগ্ধা (এসি): ১২০০ টাকা
- প্রথম শ্রেণি কেবিন: ১৮০০ টাকা
- প্রথম শ্রেণি এসি: ২২০০ টাকা
টিকিট বুকিংয়ের জন্য অনলাইনের সুবিধাও রয়েছে, যা সময় ও কষ্ট দুটোই সাশ্রয় করে। যেহেতু ট্রেনটি এখনো চালু হয়নি, তাই টিকিটের মূল্য এখনো নিশ্চিত নয়।
সৈকত এক্সপ্রেস কেন বেছে নেবেন?
১. ক্লান্তিহীন ভ্রমণ:
সড়কপথের গাড়ির ঝাঁকুনির তুলনায় ট্রেন ভ্রমণ অনেক বেশি আরামদায়ক।
২. পরিবেশবান্ধব:
ট্রেন ভ্রমণ পরিবেশবান্ধব, যা প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করে।
৩. পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক:
পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ট্রেনের সময়সূচী এবং সুবিধাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪. স্মরণীয় যাত্রা:
প্রাকৃতিক দৃশ্য আরামদায়ক পরিবেশে উপভোগ করার সুযোগ সৈকত এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোথাও নেই।
সৈকত এক্সপ্রেসের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সৈকত এক্সপ্রেসের যাত্রা কেবল শুরু। ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিকীকরণ এবং বিভিন্ন রুটে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন খাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে এবং ভ্রমণকে সহজ করতে সৈকত এক্সপ্রেস একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কক্সবাজারের নীল সমুদ্র আর পাহাড়ের টানে যদি আপনার মন উড়ে যায়, তবে সৈকত এক্সপ্রেস আপনার যাত্রা আরও মসৃণ ও আনন্দদায়ক করে তুলবে। ট্রেনটির সাশ্রয়ী টিকিট, সময়মতো সেবা, এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যাত্রীদের জন্য এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।
আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য সৈকত এক্সপ্রেসকে বেছে নিন। এটি শুধু একটি ট্রেন নয়; এটি স্মৃতিময় মুহূর্ত তৈরি করার একটি সুযোগ। এখনই আপনার টিকিট বুক করুন এবং উপভোগ করুন প্রকৃতির সৌন্দর্য আর আরামদায়ক যাত্রা।
সৈকত এক্সপ্রেস: চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যাত্রার এক নতুন অধ্যায়
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
সৈকত এক্সপ্রেস কী?
সৈকত এক্সপ্রেস হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক পরিচালিত একটি নতুন ট্রেন, যা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে। এটি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণকে আরও সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে।
সৈকত এক্সপ্রেসের বিশেষত্ব কী?
সৈকত এক্সপ্রেসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
আরামদায়ক কোচ: এসি ও নন-এসি উভয় প্রকার কোচে আরামদায়ক আসন রয়েছে।
খাবারের ব্যবস্থা: সুলভ মূল্যে মানসম্মত খাবার ও পানীয় পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা: সিসিটিভি ক্যামেরা ও প্রশিক্ষিত কর্মীর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
প্রাকৃতিক দৃশ্য: জানালা দিয়ে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সাশ্রয়ী ও দ্রুত যাত্রা: সময়মতো পৌঁছানো যায় এবং যানজটের ঝুঁকি নেই।সৈকত এক্সপ্রেসের সময়সূচী কী?
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার:
ছাড়ার সময়: সকাল ৬:১৫
পৌঁছানোর সময়: সকাল ৯:৫৫কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম:
ছাড়ার সময়: সকাল ১০:৩০
পৌঁছানোর সময়: দুপুর ২:৩০[সময়সূচী পরিবর্তনশীল, তাই রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।]
সৈকত এক্সপ্রেসের টিকিট মূল্য (Chittagong to cox’s bazar train ticket price) কত?
টিকিট মূল্য শ্রেণি অনুযায়ী ভিন্ন হয়। আনুমানিক মূল্য হলো:
শোভন: ৪৫০ টাকা
শোভন চেয়ার: ৭০০ টাকা
স্নিগ্ধা (এসি): ১২০০ টাকা
প্রথম শ্রেণি কেবিন: ১৮০০ টাকা
প্রথম শ্রেণি এসি: ২২০০ টাকা[টিকিট মূল্য পরিবর্তনশীল, তাই রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।]
সৈকত এক্সপ্রেসের টিকিট কীভাবে বুক করব?
অনলাইন (eticket.railway.gov.bd) এবং স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট বুক করা যায়।
সৈকত এক্সপ্রেসের ভবিষ্যৎ কী?
ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিক হবে এবং বিভিন্ন রুটে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে।