পেচার দ্বীপ (Pechar Dwip): অজানা এবং অপরূপ সৌন্দর্য
একটি মেয়ের বাড়তি সৌন্দর্য প্রকাশ পায় গহনায়। অনুরূপ মাতৃভূমির গহনা হিসেবে কাজ করে সবুজে ঘেরা পাহাড়, নীল জলরাশি বেষ্টিত দ্বীপ। আজ আমরা জানব বাংলাদেশের অনন্য একটি দ্বীপ সম্পর্কে যা পেঁচার দ্বীপ (Pechar Dwip) বা ধোয়া পালং নামে পরিচিত। একটি দ্বীপের সিংহভাগ আকর্ষণ হল সমুদ্র। কিন্তু আমি বলছি এমন এক দ্বীপের কথা যেখানে সবুজ ও নীলের মায়া আপনাকে যুগপৎ বেঁধে রাখবে। যারা পাহাড় ও সমুদ্র উভয়ই একসঙ্গে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য পেঁচার দ্বীপ এক “নৈস্বর্গিক স্বর্গরাজ্য”।
পেচার দ্বীপ (Pechar Dwip) এর সৌন্দর্য

এর আরও কিছু ডাকনাম রয়েছে গোয়ালিয়ার ঢালা/ রেজুখাল টু মরিচ্ছা। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোড থেকে হিমছড়ির পর রেজুখাল ব্রীজ থেকে হাতের বামে মাত্র ৭ মিনিটের হাঁটা পথে দেখা মিলবে এই মনোরম দ্বীপটির। এখানে পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ছোট ছোট পাহাড় দেখতে পাবেন। মনে হবে যেন আপনার ডানে ও বামে কে যেন লম্বা সবুজ গালিচা পরম যত্নে বিছিয়ে রেখেছে। যেখানেই সবুজের সমারোহ, সেখানেই পাখির কলকাকলি
তাই এখানে পাখির কিচিরমিচির ও শুনতে পাবেন। ছোট এসব টিলার উপর থেকে পশ্চিমের সূর্যাস্ত বা সমুদ্রের গর্জন বা রেজুখালের বয়ে যাওয়া কলকল ধ্বনি আপনার মনকে প্রশান্ত করতে বাধ্য। যাত্রীছাউনির ব্যবস্থাও আছে পর্যটকদের জন্য। এছাড়া পর্যটকরা যেন পেঁচার দ্বীপের আদ্যপান্ত উপভোগ করতে পারেন তার জন্য রয়েছে ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থা। রেজু ব্রীজের সন্নিকটেই মারমেইড ইকো রিসোর্ট। চলুন জেনে নেয়া যাক এই ইকো রিসোর্টের আপাদমস্তক।
মারমেইড ইকো রিসোর্ট (Mermaid Eco Resort)

ব্যস্ততার বেড়াজালে আর সবুজহীন শহরে যখন গরমে জীবন অতিষ্ঠ তখন কক্সবাজারে নির্জন পেঁচার দ্বীপ (Pechar Dwip) ও মনোরম ইকো রিসোর্ট গুলো আপনার জন্য হতে পারে শান্তির বার্তা। তেমনি একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র মারমেড ইকো রিসোর্ট। এখানে পাবেন অফুরন্ত নির্মল বাতাস যা আপনার মনকে আন্দোলিত করবে। তাই ভাবতে হবে না কৃত্রিম ঠান্ডা যন্ত্র এয়ারকুলারের কথা। এই ইকো রিসোর্টটি ব্যক্তিগত খাতে নির্মিত।
ইকো ট্যুরিজম এর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে প্রকৃতির কোন প্রকার সম্পদ নষ্ট না করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে রিসোর্ট তৈরি করা। মারমেইড ইকো রিসোর্ট ও তার ব্যতিক্রম নয়। এই রিসোর্টে ৩০ টি কটেজ রয়েছে। আর কটেজের অভ্যন্তরের রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরি রুম। রিসোর্ট এর অভ্যর্থনা কক্ষে এগিয়ে গেলে কেউ একজন বুনোফুলের গুচ্ছ হাতে স্বাগত জানাবে আপনাকে। তারপর সদ্য গাছ থেকে পাড়া তাজা ডাব ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস হিসেবে দেয়া হয় যা খেয়ে আপনি একেবারেই চাঙা হয়ে উঠবেন। কুঠিরের ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এখানকার হাম্মামখানা গুলোতেও প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করে শৌখিনতার ছোঁয়া আনা হয়েছে। ব্যবহার্য জিনিসগুলোর কিছু কিছু সূক্ষ্ম বিষয় খেয়াল করলে আপনিও বুঝতে পারবেন। যেমন বোতলের পরিবর্তে কাঁচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে তৈরি শ্যাম্পু এবং সবুজ পাতা দিয়ে ভিন্নভাবে ঢেকে রাখা। উভয় পাশে কাঠগোলাপ গুঁজে দেয়া। নারকেলের খোলে সাবান শ্যাম্পু রাখা। পরিবেশের জন্য হানিকর এমন জিনিসগুলো মারমেইড রিসোর্টে কম ব্যবহার হয়েছে।
পেঁচার দ্বীপের (Pechar Dwip) নৈস্বর্গিক পরিবেশ বজায় রেখেই সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে এই অবকাশযাপন কেন্দ্রে। এই ইকো রিসোর্টের স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান। শহরের ব্যতিব্যস্ততা এখানে নেই। মধ্যাহ্নের কড়া রোদ ম্লান হয়ে এলে কুটির সামনের বাঁশের বেতে গা এলিয়ে বসে উপভোগ করতে পারবেন নিশ্চুপ নির্জনতা। ইচ্ছে হলে বেড়িয়ে পড়ুন নৌকা ভ্রমণে।
এ রিসোর্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম আছে যার মধ্যে ১ম ক্যাটাগরির রুম ভাড়া ২৫০০-৬০০০ আর ২য় ক্যাটাগরির রুম ভাড়া ৮০০০-১৬০০০ টাকা। তিন তারকা হোটেলের যাবতীয় সুবিধা আছে এ রিসোর্টটিতে। এখানে মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজের খাবার হিসেবে রয়েছে সিফুড, ইউরোপীয়, ক্যারিবীয় ও দেশি মুখরোচক খাবার।
রেজু খাল

মারমেইড ইকো রিসোর্ট (Mermaid Eco Resort) এর বাংলো আর নারকেল গাছের সারির পর একটু হেঁটেই রেজু খালের পাড়। খালের পাশ দিয়েই ভেসে যাচ্ছে বাহারি সাম্পান। বালির ওপর পা রাখতে একদল লাল ক্ষুদে সৈনিকের হুড়োহুড়ি। বলছি কাঁকড়ার কথা। দখিনা বাতাস দোলা দিয়ে যাচ্ছে বিশাল ঝাউবনকে। আর সাগরপাড়ের বিরামহীন গর্জন তো আছেই। তারপর বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যের পর আকাশের পূর্ণচন্দ্র ও সাগরের ডাক যেন আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করে দিবে এক নিমিষেই। রিসোর্ট টি সাথেই রয়েছে স্থানীয় মন্দির, মাছের বাজার এবং অন্যান্য দেশীয় কৃষ্টির সমারোহ। নেই কোনো আড়ম্বর ভাব, নিরিবিলি গোছানো পরিবেশ ও নিরাপত্তা। আছে প্রশিক্ষিত কর্মী, যাদের আচরণ ও বেশ সুশীল ও আন্তরিক।
পেচার দ্বীপ (Pechar Dwip) কিভাবে যাবেন
কক্সবাজারের কলাতলী হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে (Pechar Dwip)। মারমেইড ইকো রিসোর্টে নানারকম বাংলো আছে। তবে পৌঁছানোর আগেই বুকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ভাড়া দুইশ টাকার মতো।
এই বিলম্ব না করে গরমের ছুটি কাটাতে চলে আসুন প্রকৃতির আপন নীড়ে।
প্রশ্ন ১: পেঁচার দ্বীপ কোথায় অবস্থিত এবং সেখানে কিভাবে যাওয়া যায়?
উত্তর: পেঁচার দ্বীপ কক্সবাজার জেলার মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে হিমছড়ির পরে অবস্থিত। রেজুখাল ব্রিজ থেকে বাম দিকে মাত্র ৭ মিনিটের হাঁটা পথ। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে পেঁচার দ্বীপে যাওয়া যায়।
প্রশ্ন ২: পেঁচার দ্বীপে প্রধান আকর্ষণগুলো কি কি?
উত্তর: পেঁচার দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হলো সবুজ পাহাড় এবং নীল সমুদ্রের এক অপূর্ব মিলন। এখানে হেঁটে ছোট ছোট পাহাড় দেখা, পাখির কলকাকলি শোনা এবং পশ্চিমের মনোরম সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। এছাড়া রেজু খালের শান্ত বয়ে যাওয়াও মনকে শান্তি এনে দেয়।
প্রশ্ন ৩: মারমেইড ইকো রিসোর্টে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর: মারমেইড ইকো রিসোর্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩০টি কটেজ, ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ ও প্রেক্ষাগৃহের সুবিধা রয়েছে। রিসোর্টে পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানে তিন তারকা হোটেলের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।
প্রশ্ন ৪: মারমেইড ইকো রিসোর্টে থাকার খরচ কেমন?
উত্তর: মারমেইড ইকো রিসোর্টে প্রথম ক্যাটাগরির রুমের ভাড়া ২৫০০-৬০০০ টাকা এবং দ্বিতীয় ক্যাটাগরির রুমের ভাড়া ৮০০০-১৬০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: রেজু খাল কোথায় অবস্থিত এবং এর আশেপাশে কি দেখার আছে?
উত্তর: রেজু খাল মারমেইড ইকো রিসোর্টের কাছেই অবস্থিত। খালের পাশে বাহারি সাম্পান দেখা যায় এবং বালির চরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি চোখে পড়ার মতো। আশেপাশে ঝাউবন এবং সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করা যায়। রিসোর্টের কাছে স্থানীয় মন্দির ও মাছের বাজারও রয়েছে।
Great post 👏🏻
আমার জীবনে এ প্রথম শুনা পেঁচার দ্বীপ এখন যাওয়া বাকি ঘুরে আসবো । আর যে কথা গুলো এত সুন্দর করে সাজানো আর বুঝে বলছেন আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে ধন্যবাদ!
valo likhechen