কক্সবাজারের অফ সিজন কখন

কক্সবাজারের অফ সিজন কখন – ভ্রমণের সেরা সময় ও পরামর্শ

5/5 - (1 vote)

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান কক্সবাজার বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রুপে সাজে। তাই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা অনেকসময়েই অফ সিজন আর পিক সিজন এই বিষয়গুলো নিয়ে দ্বীধাদন্দে ভোগে। তারা অনেকেই বুঝতে পারে না, কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য সেরা সময় কোনটি। আর তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারের অফ সিজন কখন, পিক সিজন কখন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাহলে চলুন কক্সবাজারের অফ সিজন কখন এবং কক্সবাজার ভ্রমণের সেরা সময় এবং এই সম্পর্কিত সকল খুটিনাটি বিষয়গুলো জেনে নেই।  

কক্সবাজার অফ সিজন কি 

কক্সবাজার অফ সিজন বলতে সাধারণত বছরের যে মৌসুমে তুলনামুলক পর্যটক কম থাকে এবং আবহাওয়া পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি আদর্শ না। অফ সিজনের আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমনঃ 

  • হোটেল ভাড়া কম থাকে 
  • যানবাহন ভাড়া কম থাকে 
  • বৃষ্টিপাত বেশি থাকে 
  • রৌদ্রের তাপ বেশি থাকে 
  • প্রকৃতির ভিন্ন রুপ থাকে। 

এছাড়াও অফ সিজনে হোটেল রিসোর্ট এবং যানবাহন ভাড়াতে অনেক বেশি পরিমান ডিসকাউন্ট থাকে।   

কক্সবাজার অফ সিজন কখন 

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এই ৬ মাস কক্সবাজার অফ সিজন থাকে। মূলত এই সময়ে কক্সবাজার সহ সারা বাংলাদেশেই বৈরি আবহাওয়া থাকে। রৌদ্রের তাপ প্রকর থাকে এবং তাপমাত্রা তুলনামুলক অনেক বেশি থাকে। এই সময়গুলোতে অনেক বেশি বৃষ্টি পাত হয়। পরিবেশ স্যাতসেতে থাকে। ফলে কক্সবাজার গিয়ে ভ্রমণের জন্য সেভাবে সময় এবং সুযোগ হয়ে উঠে না। 

অক্টোবর থেকে মার্চ এই ৬ মাস কক্সবাজার পিক সিজন থাকে। এই সময়গুলোতে বাংলাদেশে শীত মৌসুম থাকে। রৌদ্রের তাপ তুললামুলক কম থাকে এবং তাপমাত্রা কম ,সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এই ৬ মাসে অধিক বৃষ্টিপাত হয় না। তাই কক্সবাজারের প্রতিটি ভ্রমণ স্পটে খুব সহজেই ভ্রমণ করা হয়।  

তবে কম খরচে এবং শান্ত পরিবেশে কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য সবর্দা অফ সিজনই বেষ্ট হয়ে থাকে। 

কক্সবাজার অফ সিজনের মাসভিত্তিক বিভাজন

কক্সবাজার অফ সিজনের মাসগুলোকে দুইটি মৌসুমে ভাগ করা হয়। এপ্রিল থেকে মে মাস গ্রীষ্মকাল এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল। নিম্নে কক্সবাজার অফ সিজনের মাসভিত্তিক বিভাজনটি তুলে ধরা হলো হলো। 

গ্রীষ্মকাল ( এপ্রিল – মে )

এপ্রিল থেকে মে মাস বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে কক্সবাজারের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। সাধারণত এই সময়ে তাপমাত্রা ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনেক বেশি গরম এবং পরিবেশ আদ্র থাকে। সমুদ্রের পানি তুলনামুলক গরম থাকে। তবে এই সময়টা সূর্যদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য পারফেক্ট সময়। 

বর্ষাকাল ( জুন – সেপ্টেম্বর )

জুন থেকে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে বর্ষাকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে কক্সবাজার সহ সারা বাংলাদেশে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পরিবেশ অনেক বেশি স্যাতসেতে থাকে। অনেক দর্শনীয় স্থানগুলোতে বৃষ্টির কারণে ভ্রমণ করা পসিবল হয় না। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ থাকে। তবে যাদের ফটোগ্রাফির প্রতি অনেক বেশি ভালোলাগা কাজ করে তারা এই সময়ে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই বর্ষায় সিজনে কক্সবাজার যেতে চাইলে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

অফ সিজনে কক্সবাজার ভ্রমণের সুবিধাসমূহ

অফসিজনে কক্সবাজার ভ্রমণের বেশি কিছু সুবিধা রয়েছে। নিম্নে সকল সুবিধাগুলো তুলে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। 

সাশ্রয় খরচ 
  • অফসিজনে হোটেল ভাড়া ৪০-৬০% পর্যন্ত কম থাকে। পিকসিজনে যে সকল রুম ভাড়া ৫০০০ টাকা অফ সিজনে সেগুলো ২০০০-৩০০০ টাকাতে পাওয়া যায়। এছাড়াও লাক্সেরি রিসোর্টগুলোতেও বড় ধরণের ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। 
  • অফসিজনে পরিবহন খরচ ২০-৩০% কম থাকে। হোটেল থেকে বিচ পর্যন্ত রিকশা / সিএনজি ভাড়া কম থাকে। 
  • অফসিজনে খাবারের খরচ তুলনামুলক অনেক বেশি কম থাকে। 
কম ভিড় ও শান্ত পরিবেশ 
  • অফসিজনে তুলনামুলক পিক সিজনের থেকে বিচ, হোটেল, রিসোর্ট গুলোতে কম ভিড় থাকে।
  • হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট থেকে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়। 
  • কম ভিড়ের কারণে ফটোগ্রাফি করার জন্য আদর্শ 
  • গোলমাল ও অস্বস্তি কম বোধ হয়। 
আরও পড়ুনঃ ইউ এস বাংলা ঢাকা টু কক্সবাজার প্যাকেজ ২০২৫
সহজ বুকিং সুবিধা 
  • অফসিজনগুলোতে অগ্রিম বুকিং ছাড়াই হোটেল পাওয়া যায়।  
  • পছন্দ মতো রুম নেওয়া যায়। 
  • হোটেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি অপশন থাকে। 
  • দরকষাকষির জন্য ভালো সুবিধা পাওয়া যায়। 
প্রকৃতির ভিন্ন রুপ
  • অফসিজনে বর্ষাকালের এবং সমুদ্রেরর অন্যরকম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। 
  • মেঘলা আকাশে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। 
  • প্রকৃতির সতেজতা উপভোগ করা যায়। 

এছাড়া অফসিজনে কম ভিড়ে একান্ত সময় কাটানো, স্থানীয়দের সাথে বেশি মেলামেশার সুযোগ পাওয়া যায়। 

অফ সিজনে যাওয়ার অসুবিধা ও সমাধান

অফসিজনে ভ্রমণের সুবিধাগুলোর পাশাপাশি বেশকিছু অসুবিধা রয়েছে। চলুন অফসিজনে কক্সবাজার যাওয়ার অসুবিধা সমূহ এবং এগুলোর সমাধান জেনে নেই। 

আবহাওয়াগত অসুবিধা
  • এপ্রিল – মে মাসে অনেক বেশি গরম থাকে 
  • জুন – সেপ্টেম্বর মাসে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে 
  • প্রকৃতিতে অফসিজনে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে 
  • অফসিজনগুলোতে প্রকৃতিক দুর্যোগ যেমন, ঝড় এবং জলস্বাচ্ছ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সমাধান
  • অফসিজনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে হালকা ও শুষ্ক পোশাক নিয়ে যাওয়া 
  • ছাতা ও রেইনকোট সঙ্গে নেওয়া 
  • সানস্ক্রিন ও হ্যাট ব্যাবহার করা 
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা
সেবাগত অসুবিধা
  • অফসিজনে বেশকিছু ওয়াটার স্পোর্টস বন্ধ থাকতে পারে। 
  • সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্কতা বেশি 
  • বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও দোকান দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় 
সমাধান   
  • আগে থেকেই খোজ নিয়ে যান 
  • বিকল্প পরিকল্পনা করে রাখুন 
  • হোটেল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন 
  • স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন 

ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ

কক্সবাজারে অফসিজনে ভ্রমণের জন্য নিম্নে কিছু কার্যকারী পরামর্শ তুলে ধরা হলো। 

  • জুন মাসের শুরু অথবা সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সময়টা নির্বাচন করুন। 
  • যেহেতু এই সময়ে হোটেল গুলো ফাঁকা থাকে সেহেতু সরাসরি হোটেল ম্যানেজার / মালিকের সাথে কথা বলে হোটেল নির্বাচন করুন। 
  • ইন্ডোর অ্যাক্টিভিটির করা জন্য পরিকল্পনা রাখুন
  • স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিন। 
  • অফ সিজনে যেহেতু রুম আপগ্রেডের সুবিধা বেশি তাই চেকইনের সময়ে জিজ্ঞেস করুন। 
  • বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখে ভ্রমণের প্লানিং করুন। 

এছাড়াও বৃষ্টির সময়ে কক্সবাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রুফ ডভাইস সাথে নেওয়ার চেষ্টা করুন অথবা ওয়াটার প্রুফ ফোন কভার ইউজ করুন। হোটেলে ফ্রি ব্রেকফাস্টের কিংবা অন্যান্য সুবিধার অপশন আছে কি না জেনে নিন। 

পরিশিষ্ট 

যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে অফ সিজনে কক্সবাজার ভ্রমণ করেন তবে এটি আপনার জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হতে পারে। আশা করি কক্সবাজার অফ সিজন কখন এবং কক্সবাজারে অফসিজনে ভ্রমণের জন্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। যদি অফসিজনে কক্সবাজার ভ্রমণ সম্পর্কে কোন তথ্য জানার থাকে তবে কমেন্ট করতে পারেন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *